Tuesday 16 December 2008

বাংলা ব্লগ দিবসের ব্যর্থ নাটক, সাধারণ ব্লগারদের বিজয়

বিগত বছরগুলোর মতই ১৫ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্ত কোনো বিশেষ ব্যানার ঝুলাতে না পারলেও ১৬ ডিসেম্বরকে বাংলা ব্লগ দিবস পালনের ঘোষণা দিয়েছিল সামহয়ারইনব্লগ।
'নোটিশবোর্ড' নিকের মাধ্যমে দেয়া তাদের এ ঘোষণা ছিল চরম মিথ্যা ও বিভ্রান্তিতে ভরপুর।
ঘোষণার ১ম প্যারা ছিল -

"১৬'ই ডিসেম্বর, আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের দিন, বিজয়ের
দিন। এই বিশেষ আনন্দের দিনটিতেই আমরা সামহোয়্যার ইন... ব্লগিং জগতে মাতৃভাষা বাংলায়
ব্লগিংকে পরিচয় করিয়ে দেই, যা "বাঁধ ভাঙার আওয়াজ" নামে প্রতিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তা পায়
।"
অথচ ২০০৫ সালের সা-ইন শুরুর আগে অনেক বাংলাদেশি ব্লগার ব্লগস্পটে বাংলায় ব্লগিং করতেন। এখনো করে যাচ্ছেন। হতে পারে সা-ইন বাংলা ব্লগিংকে জনপ্রিয় করেছে, একটা প্ল্যাটফর্ম করে দিয়েছে। কিন্তু , "ব্লগিং জগতে মাতৃভাষা বাংলায় ব্লগিংকে পরিচয় করিয়ে দেই" দাবীটি নির্জলা মিথ্যা।

বুমিং গ্রুপ বাংলা ব্লগারদের ১৬ ডিসেম্বরে ব্লগ দিবস পালনের যে টোপ ফেলা হয়েছিল, তাতে করে ১০ বছর পরে হয়তো বিজয় দিবস ম্লান করে ১ লাখ ব্লগার পালন করত ব্লগ দিবস। এ অপরিণামদর্শিতা অস্পষ্ট কিছু নয়।

অবশ্য ব্লগাররা এর প্রতিবাদ জানিয়েছে ঐ পোস্টেরই কমেন্টে-


ইয়র্কার বলেছেন: আমরা বিজয় দিবস এর আনন্দের পাশাপাশি এই দিনটিকে
"বাংলা ব্লগ দিবস" হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ------এই 'আমরা' কারা?
ব্লগারদেরকে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়েছে বলে মনে পড়ে না।ব্লগারদের মিলনমেলার
প্রতি আন্তরিক শুভকামনা।কিন্তু এরকম হঠকারিতামূলক ঘোষণা দেখে জামাতের 'মুক্তিযোদ্ধা
পরিষদ' গঠন ও খালেদা জিয়ার ১৫ই আগস্ট জন্মদিন পালনের কথা মনে পড়ে যায়।যে ব্লগ এত
ব্লগারের দাবির প্রেক্ষিতেও শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসে একটি ব্যানার করতে পারেনা, তারা
ব্লগারদেরকে জিজ্ঞেস না করেই 'বাংলা ব্লগ দিবসের' ঘোষণা দেয়া স্ট্যান্টবাজির বাইরে
কিছু নয়।

রোবোকপ
বলেছেন: বিজয় দিবস উপলক্ষে একটা ব্যানার টাঙ্গাইতে পারে না, আর বিজয় দিবসকে
ধামাচাপা দিয়া ব্লগ দিবস করে। কত্তবড় বাটপারের মাথা থিকা এই বুদ্ধি বাইর হইতে পারে
চিন্তা করতাছি।

আরণ্যক যাযাবর বলেছেন: ভয়াবহ রকম হাস্যকর মনে হলো। হঠাত বহুবচনের
এই "আমরা" এসে হাজির হলাম, বাংলা ব্লগ দিবস নিয়ে। স্বঘোষিত এই আমরা কারা? তারা কয়
জন?এই তথাকথিত "আমরা" দের প্রতি অনুরোধ,বাংলা ব্লগ দিবস পালনের আগে বাঙালি মনন,
বাঙালি চেতনা, স্বাধীনতা, ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ এইসবের সাথে সম্পৃক্ত হতে শিখুন।

আচার্য বলেছেন: ১৬ ডিসেম্বর শুধু মাত্র বিজয় দিবস! অন্য কোন দিবস যুক্ত করা যেতে পারে না। অন্য কোন দিন ব্লগ দিবস পালন করা যেতে পারে।।


জ্বিনের বাদশা বলেছেন: ১৬ ই ডিসেম্বরে বিজয় দিবস রয়ালির পাশাপাশি "বাংলা ব্লগ দিবস" শোভাযাত্রা করা হবে একটা হঠকারী ব্যাপার ...আমার মনে হয় এ দিনটাকে কোনভাবেই অন্য কোনকিছুর স্মারক করা উচিত হবেনা

খোমেনী ইহসান বলেছেন: সা.ই কর্তৃপক্ষ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের দিনে বাংলা ব্লগ দিবস পালন করবার আয়োজন করেছে। শাদা চোখে বিষয়টা ভালোই লাগে। স্থির করে ঝুলানো পোস্টটাতে প্লাস আর তেল মারার ব্যাপার মুড়ি-মুড়কি হয়ে যাওয়ায় একটু আশঙ্কার কথা বলতে চাচ্ছি-বিশ্ব বেহায়া এরশাদ বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখলের পর দেশের তাবৎ বিপ্লবী ও গণতন্ত্রীদের মধ্যে একটা ইন্দুরও এর কোন প্রতিবাদ জানাইলো না। সর্ব প্রথম ১৯৮৩'র ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাজপথে প্রতিবাদ জানায়। তারা বেহায়া এরশাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। স্বৈরাচারের শাসনকালের এই পয়লা প্রতিবাদে এরশাদ মহা রোষে প্রতিবাদরত ছাত্রদের সমাবেশে ট্রাক চালিয়ে দেয়। তাতে দিপালী সাহাসহ আরও কয়েক জন ছাত্র শহীদ হন। এই শহীদদের ছাত্র সমাজ দীর্ঘ সময় ধরে বেশ শ্রদ্ধার সাথেই স্মরণ করতো।কিন্তু ৯০ এ সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের শফিক রেহমান ভালোবাসা দিবসের আয়োজন করেন ১৪ ফেব্রুয়ারি। এই ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে এখন এমন দিবসে পরিণত হয়েছে যা সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এই দিবস পালনে ভালোবাসা বাড়ে না কমে জানিনা। তবে বেশ আলগা কিস এগাল ওগাল রাঙ্গিয়ে যায় নিশ্চিত। ফাঁক তালে বাণিজ্যও করে মিডিয়া, রুটি, বিস্কুট, ফুঁচকা, চাইনিজ খাদ্য অলারা আর হোটেল মালিকরা।মাঝখান থেকে হারিয়ে গেছে ১৪ ফেব্রুয়ারির শহীদ দিপালী সাহারা। একটি জাতির জীবনে ভালোবাসা কী কাজে আসে জানিনা, তবে শহীদদের ভুলে যাওয়াটা কতো দুঃখের ও শোকের তা বলগাইয়া বোঝানোর দরকার নাই।অথচ বাংলাদেশে ভালোবাসার জন্য একটা দিবস হিসেবে ১ লা ফাল্গুনকে নির্ধারণ করা যেতো। কিন্তু শফিক রেহমান একটা শহীদ দিবসকে ভালোবাসা দিবস করে স্বৈরাচার বিরোধী চেতনাকে খাঁটো করে ফেললেন। যার ফলাফল হিসেবে এখন বিশ্ববেহায়া এরশাদ এখন নতুন করে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়ে গেলেন। কে না জানে এদেশের শাসকদের মধ্যে এরশাদই সবেচেয়ে বেশি ভালোবাসাবাসির সাথে জড়িত। তিনি কবরে যাওয়ার আগেও রমণ করেন, বাচ্চার বাবা হওয়ার দাবি করেন। তো শহীদ দিবসে ভালোবাসা দিবস পালন হলে তিনি নির্ভার হয়ে যেতে পারেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার গ্লানি থেকে তিনি মুক্ত হয়ে যান।বিগত দুই বছরের মুখোশধারী স্বৈরশাসনের প্রথম বছরে অর্থাৎ ২০০৭ এর ১৪ ফেব্রুয়ারি আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্ররা 'শিক্ষা বাণিজ্যের' প্রতিবাদে কলা ভবনের সমস্ত বিভাগে ধর্মঘট পালনের মাধ্যমে ১৪ ফেব্রুয়ারির চেতনাটা ধরতে চেষ্টা করে সফল হয়েছি। কিন্তু পরের বছরেই ভালোবাসা দিবসের জোরটা আমাদের এক বছর আগের সাফল্যকে আন্দোলনকারীদের ভেতর থেকেই মুছে ফেলতে সক্ষম হয়।এখন কথা হচ্ছে, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সহ বিশ্বের সকল স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য অত্যন্ত মর্যাদার ও উল্লসিত হওয়ার দিন। এদিনটা শুধই বিজয়ের। এদিনে অন্য কিছুকে টেনে আনাটা শুভবুদ্ধির কাজ হতে পারে না।আমরা ভোগী জীবনের লীলা দেখছি বিশ্বময়, তাতে কিন্তু সব কিছু ভুলে যাওয়ার একটা ব্যাপার দাড়িয়ে গেছে। হয়তো বাংলাদেশেও এক সময় বিজয় দিবস ভুলে যাওয়া হবে। শুধু একটা বুলি আওড়ানোর দিবস হিসেবেই ১৬ ডিসেম্বর প্রতিবছর আমাদের মাঝে উপস্থিত হবে। যদি না আমরা এ দিবসটার মর্যাদা, অনন্যতা, অখন্ডতা ও কোন কিছুর সাথে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আগে ভাগেই সাবধান হই।বাংলাদেশে ও প্রবাসে এখন অনেক লোক ব্লগিং এ জড়িত। তারা যদি এ দিন বিজয় দিবসের পাশাপাশি আরেকটা দিবস পালনে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে বিষয়টা ভালো হয় না। একটা অকাজ হয়। বিজয় দিবসকে বিয়ে পড়ানোর ব্যাপার হয়ে যায়।আমি মোটের উপর বলতে চাচ্ছি এ দিন বাংলা ব্লগ দিবস পালন না করা হোক। এ ব্যাপারে সা.ই. কর্তৃপক্ষকে বলবো আপনারা বাংলা ব্লগের চিন্তা নিশ্চয় অন্য কোন দিন থেকেই করেছেন। এ দিন শুভ বাংলা ব্লগিং ঘটিয়েছেন মূলত বিজয় দিবসের তাৎপর্য মাথায় রেখে। সুতরাং দিবসটা সরিয়ে অন্য কোন দিনে নিয়ে যান। ১৬ ডিসেম্বর আমরা শুধুই বিজয় দিবস পালন করতে চাই। অন্য কিছু না।এ ব্যাপারে আমি সহ ব্লগারদের সমর্থন আশা করছি।।

এস্কিমো বলেছেন: সামহোয়ার ইনের শুভ জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সামহোয়ারের অগ্রযাত্রা ও সমৃদ্ধি কামনা করছি। কিন্তু খটকা লাগলো "বাংলা ব্লগ দিবস" পালনের ঘোষনা নিয়ে। পুরো বিষয়টা অবশ্যই ভাল। রেলি করে - চা খেয়ে যদি সচেতনতা বাড়ে ক্ষতি কি। শুধু আপত্তি থাকলো - বাংলাদেশের জন্যে বিরাট একটা দিবস সেই। আশা করা হয় ধর্ম বর্ণ এলাকা নির্বিশেষে একটা জাতি হিসাবে একটা দিন পালন করা হবে বিজয়ের আনন্দকে স্মরণ করে। (অবশ্যই রাজাকারগোস্ঠীর ভন্ডামী বাদে)। সেই দিনে আরেকটা দিবসের পরিকল্পনা করাটা ঠিক হয়নি। অনুরোধ থাকলো - দিনটি পুনর্বিবেচনা করুন। পরবর্তী সাপ্তাহিক ছুটির দিনকে বেছে নিতে পারেন। যেমন দেখা যায় - পশ্চিমে অনেক দিবস আর বন্ধ নির্বারিত হয় সাপ্তাহিক ছুটির পর দিন সোমবার হিসাবে - কোন নির্দিষ্ট তারিখকে ধরে না রেখে বলা যেতে পারে - ডিসেম্বরের ২য় বা ৩য় সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি হবে ""বাংলা ব্লগ দিবস" ।মনে হয় এতে কারো আপত্তি থাকবে না। বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্যে সামহোয়ার ইনের কর্তৃপক্ষকে অগ্রীম ধন্যবাদ


আহমাদ মোস্তফা কামাল বলেছেন: তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে অভিনন্দন।বাংলা ব্লগিং-এর ক্ষেত্রে সা.ইন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে ও করছে। বাংলা ব্লগ দিবসও পালন করা যেতে পারে। যে কোনো উৎসবই আনন্দদায়ক। কিন্তু দিবসটি ১৬ ডিসেম্বরে পালন না করে অন্য কোনো দিনে পালন করার অনুরোধ করছি। বিজয় দিবসে আমরা এমনিতেই উৎসব করি, একইসঙ্গে যাবতীয় অনাচার ও প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করি - অর্থাৎ নানারকম কর্মকাণ্ডে ও আয়োজনের মধ্যে আমাদের দিন কাটে। ওই দিনই ব্লগ-দিবসের র্র্যালিটিকে নিঃসন্দেহে দৃষ্টিকটু মনে হবে। ওইদিন বরং সা.ইন-এর পক্ষ থেকে বিজয় দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে এবং ডিসেম্বরের অন্য যে কোনো একটি দিনে ব্লগ-দিবসের উৎসব করা যেতে পারে।এখানে যেসব ব্লগার বিজয় দিবসে এই আয়োজনের বিরোধিতা করেছেন, আমি তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করি, এবং এ-ও মনে করি, এরা সবাই সা.ইন-এর মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী।আশা করছি, সিদ্ধান্তটি আপনারা পূণর্বিবেচনা করবেন।তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আবারও অভিননন্দন রইলো ব্লগ সংশ্লিষ্ট সবাইকে।

রন্টি চৌধুরী বলেছেন: আইডিয়াটা ভাল, দিনটা ভাল না।১৬ ডিসেম্বরে বিজয় দিবস। এটা আমাদের কাছে ঈদের মত।আপনি যদি ঈদের দিনে আর কোন একটি দিবস খাড়া করেন তাহলে ভাল লাগবে? ১৬ ডিসেম্বর সকালে বাংলা ব্লগ দিবস শোভাযাত্রা, হাংকি পাংকি...শুনতেই আমার কাছে নির্লজ্জ নির্লজ্জ লেগেছে। একদিন পরেএ দিবসটি পালন করলে হয় না? ১৬ ডিসেম্বর মাঠে যাব, বিজয় উল্লাসে অংশ নিব, বিজয় শোভাযাত্রা করব, পেট পুড়ে স্বাধীন বাতাস খাব, হাসব, কাদব। এদিন আমরা একটি শোভাযাত্রা করে যদি ব্লগ দিবস পালন করি এরচেয়ে নির্মম আর কি হতে পারে?ব্লগ কতৃপক্ষের দিবস পালনের ব্যাপারটিতে তো আপত্তি নেই।কিন্তু তারা ভুল দিন বেছে নিয়েছেন। বিতর্ক নিয়ে তো এ ধরনের দিবস পালন করা যায় না। এ উদ্দ্যোগও তাই সফল হবে না। যেহেতু ব্লগারদের বিশাল একটি অংশ আপত্তি জানাচ্ছেন, তাই উচিত হবে দিনটি পরিবর্তন করা। দিবস পালনে তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। সবার আপত্তি বিজয় দিবসের দিনে ব্লগ দিবস পালনে।ধন্যবাদ।

ইরতেজা বলেছেন: আমরা বিজয় দিবস এর আনন্দের পাশাপাশি এই দিনটিকে "বাংলা ব্লগ দিবস" হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।------------------তীব্র প্রতিবাদ জানাই সামহোয়ারইনের এই ধৃষ্টতা। ১৬ই ডিসেম্বর এই দিনটি আমাদের মহান বিজয় দিবস হিসেবে শুধু দেখতে চাই। এই দিনে অন্য কোন দিবস পালনের ঘোর বিরোধিতা করছি। বছরে ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৬শে মার্চ এবং ১৬ই ডিসেম্বর ছাড়াও আরো ৩৬২ দিন আছে। সেই ৩৬২ দিনের কোন এক দিন "বাংলা ব্লগ দিবস" পালন করুন।সাধারণ ব্লগারদের সহিত কোনরুপ আলোচনা না করে কর্তৃপক্ষ নিজেরা নিজেদের ইচ্ছেমত "বাংলা ব্লগ দিবস" ঘোষণা দেওয়া এবং মহান বিজয় দিবসে শহীদের প্রতি কোনরুপ শ্রদ্ধা না দেখিয়ে ১৬ই ডিসেম্বর "বাংলা ব্লগ দিবস" পালন করার ঘোষনার পোষ্টকে কষে মাইনাস দিলাম। এই হাস্যকর প্রস্তাবের বিরোধিতা করা হল।

তপন বাগচী বলেছেন: বিজয় দিবসে আমাদের সকল আনন্দ প্রকাশ করতে চাই। কিন্তু সেটি বিজয় দিবস হিসেবেই থাকবে। তাকে ব্লগ দিবস হিসেবে পউদযাপনের অর্থই হলো বিজয় দিবসকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া। পারলে আসুন সা.ই.-এর মাধ্যমে বিজয় দিবসকেই পালন করি। ব্লগদিবসকে বেছে নিন, সা.ই.-এর প্রথম সভার দিন বা অন্য কোনটাকে।এরকম চললে, পরাজিত শত্ররুরা এই দিনটাকে তাদের নিজনিজ প্রয়োজনে নানা '‌দিবস' বানিয়ে ফেলবে। আর তারা রেফারেন্স দেকে ব্লগ দিবসের। এই দিনটাকে অন্য কেউ নিজের দিবস হিসেবে ঘোষণা দিতে সাহস পায়নি, এমনকি খালেদা জিয়াও নয়, সা.ই. কেন সেই ঝুঁক নেবে। খালেদা জিয়া তাঁর তিনটি জন্মদিবস বানিয়েছেন, শেষতক জাতীয় শোক দিবসকে বেছে নিয়েছেন, কিন্তু বিজয় দিবসকে নয়। আশা কবর, ১৬ই ডিসেম্বর কেবলই কবজয় দিবস। অন্য কিছু নয়। ভাভাবির কোনো বিষয় নয়, কর্মসূচি পরিবর্তন করবেন এটাই প্রত্যাশা।

আইরিন সুলতানা বলেছেন: কর্তৃপক্ষের উচিৎ ব্লগারদের বক্তব্যগুলোর জবাব দেয়া । কারণ এখানে কিছু প্রশ্ন, কিছু জিজ্ঞাসা আছে ...চুপ করে থাকলে তা কেবল বিতর্ক এবং ক্ষোভেরই জন্ম দিবে । বিশ্ব ব্লগ দিবসের পাশাপাশি যদি বাংলা ব্লগ দিবস বলেও একটা আলাদা দিবস পালন করা হয়, তাতে বাংলা ব্লগিং এরই বিশেষ প্রচার হবেকিছু প্রশ্ন বার বারই আসছে -১. ব্লগিং দিবসের সিদ্ধান্ত নেয়া এই "আমরা" কমিটির সদস্যবৃন্দ কারা ছিলেন ? এটি নিছক কৌতুহল নিবৃত করার মানসিকতা থেকেও জানানো যেতে পারে ...২. হুট করে এরকম একটা ঘোষণা হয়ত চমক দেয়ার জন্য করা হয়েছে, কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হলো; এই ঘোষনাটি একটি জরিপ হিসেবে কি আগে নোটিশ বোর্ডে দেয়া যেত না ? তাতে আমাদের সবার ভিন্ন ভিন্ন মত হলেও অন্তত এটুকু ভাবা যেত যে, সবার অংশগ্রহণ ছিল ...৩. কর্তৃপক্ষের নি:সন্দেহে ১৬ই ডিসেম্বরকে অবমূল্যায়ন করার ভাবনা ছিলনা বলেই ধরে নিচ্ছি, বরং তাদের আত্মপ্রকাশের দিনে নিজেদেরকে বাংলা ব্লগিং জগতে পথিকৃৎ ঘোষণা করার চেষ্টাই ছিল । তাছাড়া ১৬ই ডিসেম্বর মানুষ-জন মনে কোন শোক জমা রেখেও এক বিজয় উৎসবে মাতে । সেই সুযোগে হয়ত, আরেকটা দিবসও পালন করে নেয়া যেত ....কিন্তু যদি বাংলা ব্লগ দিবস বলে একটি বিশেষ দিবসকে সত:স্ফূর্তভাবে বিখ্যাত করার চেষ্টা থাকে তাহলে ১৬ই ডিসেম্বরে এই দিবস পালন করতে গিয়ে জনগন দুটি দিবসের মধ্যে priority খুঁজবে..নি:সন্দেহে ১৬ই ডিসেম্বর সকল কিছুর উর্ধ্বে...সেক্ষেত্রে দিবস পালনের জন্য এই দিনকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত বোকামী। কর্তৃপক্ষ কি ব্লগারদের মতামত গুলোকে প্রাধান্য দেবেন ?৫. একটা উদাহরণ দেয়া যাক; ধরুন, আমি কালকে বাংলা ব্লগিং দিবসের ব্যানার হাতে নিয়ে rally করছি...এক শিশু যে হয়থ বিজয় দিবসের উচ্ছলতা দেখতে বার হয়েছে তার বা-মা কিনবা বড় ভাই-বোনের সাথে, সে তখন প্রশ্ন করবে, ব্লগ দিবস কি ? তাকে বলা হবে, ১৬ই ডিসেম্বর ব্লগ দিবস...ওদিকে শিশুটি কিন্তু প্রথমে জানতো ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস...এখন শিশুটি কি দ্বিধায় পড়ে যাবে না ? তখন সে হয়ত, ব্লগ/বাংলা ব্লগ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠবে; তার প্রশ্নগুলো সেই রকমই হবে; বিজয়ের মিছিলের আশেপাশে থেকেও বিজয় দিবস সংক্রান্ত প্রশ্নগুলো চাপা পড়ে যাবে তার মধ্যে ... ব্লগ নিয়ে উন্মাদনা হোক, তাতে সমস্যা নেই; বাংলা ব্লগিং অবশ্যই বাংলা ভাষার চর্চাকে সম্মৃদ্ধ করেছে; কিন্তু তা যদি আমাদের চেতনার সাথে জড়িত স্মৃতিকে পেছনে ফেলে দেয়, তা কি ঠিক হবে ?৪. কেউ মনে হয় না আদতে বাংলা ব্লগিং দিবস পালনের বিরোধিতা করবেন, তবে সবার ক্ষোভগুলো ঝরে পড়ছে শুধুমাত্র ১৬ই ডিসেম্বরকে বাংলা ব্লগিং দিবস হিসেবে ঘোষণা করার জন্য। কর্তৃপক্ষ কি তা বুঝতে পারছেন ?কর্তৃপক্ষ সবার মতামতগুলো পড়ে দেখছেন আশা করি ।


এই ছিল ব্লগারদের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া। আলাদা পোস্ট দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে। উল্লেখযোগ্য ছিল -

আরিফ জেবতিক,-এর চেতনা এতো ঠুনকো নয় যে দ্রুতই নাড়া খাবে....তবু ....রাগ ইমন-এর বিজয় দিবস , ব্লগ দিবস এবং কোলা ব্যাং এর গল্প
জামাল ভাস্কর-এর ব্লগ দিবস পালনের ঘোষণা একটা বালখিল্য প্রয়াস...
রাজর্ষী-এর বিজয় দিবসে ব্লগ দিবস বিতর্ক
রোবোকপ-এর আসেন পয়লা ফেব্রুয়ারি বাংলা ব্লগ দিবস উদযাপন করি
রোবোকপ-এর বিজয় দিবসে সামহয়ার ইন এর অফিস থেকে বিজয় দিবসের মিছিল দেখতে চাইআকাশ সুনীল-এর বিজয়ের দিনেই তো ভাল কাজ করা উচিত, তাই এই দিনেই বাংলা ব্লগ দিবস উদযাপিত হওয়া উচিত
ফিউশন ফাইভ,-এর বিজয়ের আনন্দে বাংলা ব্লগ দিবস পালন যে কারণে সমর্থন করি
আরণ্যক যাযাবর-এর বিজয় দিবসের অবমাননা :: প্রতিবাদ না করলে আমাদের দায়িত্বশীলেরা কথা বোঝেন না কেনো?
সু-শান্ত-এর দয়া করে ১৬ ডিসেম্বর কে অন্য কোন দিবস দিয়ে ভারযুক্ত করবেন না
ইয়র্কার-এর বাংলা ব্লগ দিবস; কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বর কেন?
জহির আহমেদ-এর বাংলা ব্লগ দিবস ২০১০ (দৈনিক সংগ্রাম প্রতিবেদন)

এরমাঝে জামাল ভাস্কর ও আরিফ জেবতিক বেশ ঘোলাটে মন্তব্য সমৃদ্ধ পোস্ট দিয়েছেন। ব্লগারদের মনে থাকতে পারে - ২০০৭ এর সা-ইনের বর্ষপুর্তির পানীয়-সন্ধ্যায় আরিফ জেবতিক ও জামাল ভাস্করের উপস্থিতি ছিল দেখার মত। বাকীদের মাঝে মাহবুব মোর্শেদ এখন প্র-আলোব্লগের কর্নধার, ব্রা-রাইসু কবিসভার জন্য আলাদা সাইট চালু করেছেন এবং সা-ইনে ১৫ জানু ২০০৯ এর মধ্যে চলে যাওয়ার একটি নাটকও জমিয়েছেন। সা-ইনের আরেক ক্লোজ ব্লগার কালপুরুষ ইদাইং প্রোস্টেট সমস্যায় আক্রান্ত।

ব্লগ-বাজারে শোনা যাচ্ছে ১৬ ডিসেম্বরকে বাংলা ব্লগ দিবস ঘোষনার মূল ২ থিংকট্যাঙ্ক ছি্ল ব্লগার কৌশিক ও একরামুল হক শামীম। সা-ইনে যখন এ বিষয়ে ব্লগারদের তুমুল নিন্দায় জর্জরিত,তখন এ দুজন ছিল নীরব- অদৃশ্য। নতুন রেসিডেন্ট ভাঁড় লোকলটক/ফিউশন ফাইভ ছিল চরম নির্লজ্জ দালালিতে মশগুল।

শেষ পর্যন্ত ৭৬টি প্লাসে বিপরীতে ১৩৫টি মাইনাছ রেটিং পেয়ে সা-ইন কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। কৌশলে নূতন পোস্ট দিয়ে ব্লগ দিবস উহ্য রেখে বিজয় দিবস পালনের ঘোষনা দেয়। আশ্চর্যজনকভাবে নতুন সেই পোস্টে প্লাসের বাড়াবাড়ি ছিল চোখে পড়ার মত। মাত্র কয়েক ঘন্টায় ৫০টির বেশি প্লাস রেটিং পড়ে পোস্টে। কিন্তু তখন মধ্যরাতে লগড-ইন ব্লগার ছিল জনা তিরিশেক। সা-ইন কর্তৃপক্ষ তাদের জেদ দেখালো রেটিং ম্যানিপুলেশন করে।

নতুন লেভেলে পুরনো মদ দেখানোর মত করে সা-ইনের ব্যানারে ১৬ ডিসেম্বর পালিত হয়েছে।
সা-ইনের অদূরদর্শিতার নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে দুইদিনে।
কর্তৃপক্ষ কী শিখলো না শিখলো তার চেয়েও বড়ো কথা - ইনহাউজ মৌ-লোভী ভাঁড় ব্লগারদের ডেকে গোপনে নেয়া সিদ্ধান্ত গণ-ব্লগারদের উপরে চাপানো যায়নি, এটা প্রমাণিত হয়েছে।

বাঙালির অস্থিমজ্জায় এমন চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার অতীত ইতিহাস নেই। ব্রিটিশ বেনিয়া, পাকি শাসক হেরে গেছে কবে, কতো আগে!

নরওয়ের কর্পোরেট বণিক চক্র এটা যতো দ্রুত বুঝবে ততই তাদের মঙ্গল।