Thursday 30 October 2008

ভার্চুয়াল নিকের মালিকানা ছিনতাই অথবা সু-মা জুটির কুটকৌশল

প্রথম আলো ব্লগ চালু হোয়ার সঙে সঙে আগ্রহি ব্লগাররা যতটা না হামলে পড়েছে,তারচেয়ে বেশি হতাশ ও বিরক্ত হয়েছে নানান বিতর্কে । প্র-আ-ব্লগ ওপেন হোয়ার প্রথম দিনেই দেখা যায় সামহয়ারইনের বেশ কিছু পরিচিত নিক নিয়ে একাউন্ট খোলা হয়ে গেছে । মুকুল-নুশেরা-নরাধম-কালপুরুষ-চিকনমিয়ার মত কিছু চলতি জনপ্রিয় নিক হ্যাক হলেও বিশেষ করে সা-ইনের কর্নধার আরিল-জানার নিক নিয়ে হইচই পড়ে । একপর্যায়ে সা-ইনে আরিল পোস্ট দিয়ে বলে – “
this is the right time for the authorities to sit together and collaborate to
protect the identities of all bangla bloggers, if all parties are willing.”
বোঝা যায় – নিঃসন্দেহে আরিল তার ভার্চুয়াল সত্বার অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত ।

খানিক পরে আরিলের এ চিন্তার উনুনে কয়েক গ্লাস ঘি ঢালা মন্তব্য করেন ‘সচলায়তন’ ব্লগের কর্নধার অরুপ। তিনি বলেনঃ
সচলায়তন প্রতিষ্ঠার পরে সামহয়ারইনব্লগে "সচলায়তন" নামে একটি নিক খুলে বিভ্রান্তি
ছড়ানো হয়। আরিলকে অনুরোধ করেছিল এসএম মাহবুব মোর্শেদ নিকটি বন্ধ করতে। আরিল সম্মত
হননি। তার নিজস্ব ব্যাখ্যা ছিল... কিন্তু উদ্দ্যেশ্য যেখানে স্পষ্ট সেখানে সহযোগিতা
না করাটা ছিল হতাশাব্যঞ্জক... পুনশ্চ: নোটিশবোর্ড সেদিন দাবী করেছেন যে নিকটি ব্যান
করা হয়েছিল, আরিফ জেবতিকের সাম্প্রতিক লেখায় পড়লাম ব্যান করা হয় নিক তৈরির ১৯ দিন
পরে এবং তা অবশ্যই সচলায়তনকে ডিফেম করার জন্য নয়..

অরুপের এ কমেন্টের আজ ৪দিন পার হলেও আরিল কোনো জবাব দেন নি । অবশ্য এর আগেই আরিফ জেবতিকের এক পোস্টে ‘সচলায়তন’ নিক সৃষ্টি,কর্তৃপক্কের পক্ষ থেকে প্রশ্রয় এবং অনেক পরে মডারেশনের ঘটনা পরিষ্কার হয় মন্তব্যের ঘরে । সা-ইনের কর্তৃপক্ষ নিক নোটিশ বোর্ড এসে মিথ্যা সাফাই গাইলে তথ্য প্রমানসহ আরিফ জেবতিক জানান –

@নোটিশ বোর্ড :সচলায়তন নিকটি চালু হয়েছে : ০২ রা জুলাই, ২০০৭ সকাল ৮:৪৪ আর শেষ
পোস্ট দিয়েছেন ঐ নিকধারী : ২১ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ১:১৬ মাঝখানে ব্যবধান হচ্ছে ১৯
দিন । আর ঐ নিককে ব্যান করা হয়েছে সম্ভবত: তার ইতিহাস সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য
পরিবেশনের দায়ে । কোনভাবেই অন্য সাইটের নামের সাথে তার নামের মিলের জন্য নয় । অথচ আপনার কমেন্টটি এখানে বিভ্রান্তি তৈরী করছে । ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন কমেন্টের
কারনে যদি আমার মনে হয় যে আপনি আমার ব্লগে বিভ্রান্তি তৈরী করছেন , তাহলে আপনাদের
"নোটিশ বোর্ড " নিকটি ব্লক করে দেয়া হবে ।
ডান্ডাবাজ নোটিশ বোর্ডকে কমেন্ট ব্লক করার এমন স্পষ্ট হুমকি সা-ইনে সম্ভবত এটাই প্রথম । ঐ পোষ্টে সা-ইনের মডারেটর বলে পরিচিত আরিল-জানা-দেবরা বা তাদের নোটিশ বোড নিকটিকে আর কমেন্ট করতে দেখা যায়নি ।তবে এরপর কথা বাড়িয়েছেন ব্লগার আছহাবুল ইয়ামিন, যাকে ব্লগস্ফিয়ারের কেউ কেউ সা-ইনের অঘোষিত মডারেটর বলে মনে করেন ।

যতই পারষ্পরিক বোঝাপড়ার কথা বলা হোক না কেন, আরিলের নৈতিক পরাজয় এবার সুস্পষ্ট হয়ে উঠলো । মনে হলো, সচলায়তন নিক নিয়ে ইভিল পারপাস সার্ভ করার যে চর্চাকে প্রশ্রয় আরিল দিয়েছিলেন ঠিক একই চর্চায় ফেঁসে গেলেন আরিল নিজে ।

প্র-আ-ব্লগের পক্ষ থেকে সা-ইনে সাফাই পোষ্ট দিয়েছেন কবি-গবেষক-গল্পকার-ইদানিংব্লগার সুমন রহমান। তিনি নৈতিকতার অবস্থানে প্রতিবাদ জানানোর কথা বললেও অনেকটা সুশীল কায়দায় জানান এ ব্যাপারে আইনী কিছু করার নেই । বটম লাইনে “বিষয়টা পরিষ্কার থাকা ভাল” বলে তিনি এক রকম সিদ্দান্তও টেনেছেন । ইদানিংব্লগার সুমন রহমান প্র-আ-ব্লগের উপদেষ্টা হচ্ছেন এমন খবর ব্লগস্ফিয়ারে ভেসেছে আরো আগে। প্র-আ-ব্লগে সুমন রহমানের পোস্ট পড়লে বেশ কর্ত্রপক্ষ সুলভ ভাষা পাওয়া যায় ।

এক সময় সা-ইন কর্তৃপক্ষের তোষামেদকারি মাহবুব মোর্শেদ এখন প্র-আ-ব্লগের মুল মডারেটর । নিক হ্যাকের পাশাপাশি ১ম দিন থেকেই কড়া মড়ারেশনে নেমেছে মাহবুব মোর্শেদ । কমেন্ট ব্লক,নিক ব্যান এবং তার ব্যাখ্যা নিয়ে পোস্টাচ্ছে নিয়মিত।গালির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষনা করলেও, রাজাকারকে কুত্তার বাচ্চা বলতে সমস্যা কোথায়, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি মাহবুব মোর্শেদ বা সুমন রহমান ।

সুমন-মাহবুব (সু-মা) জুটি প্র-আ-ব্লগএর ডান্ডাময়নীতিমালাকে কতোটা ব্লগারমুখী করতে পারবেন, নাকি পারবেন না সেটাই এখন দেখার বিষয় । তার আগে আরেকটি অভিযোগের উত্তর দিতে হবে সু-মা জুটিকে; অভিযোগটি গুরুতর এবং বাংলা কমুনিটি ব্লগের ভবিষ্যতের জন্য জানার দরকার । অভিযোগ উঠেছে, জনপ্রিয় নিক গুলো ছিনতাইয়ের পেছনে মূল হোতা সু-মা জুটি এবং তাদের টেকনিক্যাল টিম । উদ্দেশ্য পরিস্কার, যাতে করে ঐসব নিকের মালিক গিয়ে প্র-আ-ব্লগে প্রতিবাদ করে, নিজের নিক ফেরত নেয় এবং এই আতংকে প্রতিষ্ঠিত অন্য সব ব্লগার গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে এবং প্র-আ-ব্লগের ব্লগার হয়ে উঠে ।


এটি যদি সত্যি হয় তবে সু-মা জুটিকেও একদিন আরিলের মতো নিক অস্তিত্ব রক্ষার আহবান জানাতে হবে । ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি সুমন রহমান না জানলেও তার বোসম-ব্লগার মাহবুব মোর্শেদ জানার কথা , যদি তিনি তার বিগত-গুরু শফিক রেহমানের পরিণতি বিন্দুমাত্রও মনে রাখেন ।

Friday 24 October 2008

প্রথম আলো ব্লগ

বাংলা ব্লগে আজ প্রচন্ড উত্তেজনা লক্ষ করা গেছে। নতুন ব্লগ নিয়ে এসেছে দৈনিক প্রথম আলো, যার নাম প্রথম আলো ব্লগ। প্রথম আলো ব্লগকে স্বাগত জানিয়ে যেমন বিভিন্ন ব্লগ প্লাটফর্মে লেখা এসেছে, তেমনি একে আগাম তিরস্কার করেও এসেছে প্রচুর লেখা।

ব্লগারদের লেখা পড়ে যা মনে হলো, তারা দুটি বিষয়ে অসন্তুষ্ট।
এক. প্রথম আলোর সুদীর্ঘ কঠোর ব্যবহার ও আচরণ বিধিমালা।

দুই. সদস্য হবার জন্যে একটি আমন্ত্রণব্যবস্থা।

প্রথম আলোর বিধিমালা নিচে উদ্ধৃত করা হলো।


১.

ক) বাংলাদেশে প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করে কোনো লেখা প্রকাশ করা যাবে না।

খ) কোনো লেখার মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত আইন-কানুন লঙ্ঘন করা যাবে না।

২.

ক) দেশীয় বা দেশের বাইরের কোনো জাতি, গোষ্ঠী, ভাষা ও ধর্মের প্রতি অবমাননামূলক বা কারো অনুভূতিতে আঘাত দিতে পারে এমন কোনো লেখা প্রকাশ করা যাবে না।

খ) বিবদমান দুই বা ততোধিক জাতি, গোষ্ঠী ও ধর্মের মধ্যে জাতিগত সংঘর্ষের উস্কানি দিতে পারে এমন লেখা প্রকাশ করা যাবে না।

গ) ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্ম, সংস্কৃতি, আচার, জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস বা ভাষাকে কটাক্ষ বা অবমাননা করে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না।

ঘ) প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ অনুসারে শ্রদ্ধেয় কোনো ব্যক্তিকে হেয় করে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

ঙ) কোনো জাতি, জনজাতি, গোষ্ঠী, জাতি-উৎস, লিঙ্গপরিচয়, বয়স, শ্রেণীপরিচয়, শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা নিয়ে ঘৃণা বা অবমাননামূলক কোনো মন্তব্য প্রকাশ করা যাবে না।

চ) ধর্মগ্রন্থের বাণী ত্রুটিপূর্ণভাবে উদ্ধৃত করা যাবে না। এমনভাবে ধর্মগ্রন্থের বাণী উদ্ধৃত করা যাবে না, যাতে ধর্ম বা বাণীর অসম্মান হয়।

৩.

ক) নারীর প্রতি অবমাননা, আক্রমণ ও নিপীড়নমূলক কোনো লেখা প্রকাশ করা যাবে না।

খ) অশ্লীল ও অশালীন ইঙ্গিতপূর্ণ এমন কোনো শব্দ, বাক্য, ছবি, ভিডিও ও অডিও ব্যবহার করা যাবে না, যা নারীকে হেয় করতে পারে।

গ) নারী ব্লগারদের সঙ্গে কটাক্ষমূলক আচরণ করা যাবে না।

ঘ) ব্লগে পোস্ট দিয়ে কোনো নারী বা পুরুষকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রেম নিবেদন করা যাবে না। ব্যক্তিগত চিঠি দেয়া যাবে না।

৪.

ক) কোনো পর্নোগ্রাফিক ছবি, লেখা, তথ্য বা ভিডিও প্রকাশ করা যাবে না। কোনো পর্নোগ্রাফিক সাইটের লিংক দেওয়া যাবে না।

খ) এমন কোনো লেখা প্রকাশ করা যাবে না যা সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অশ্লীল বা অশালীন বলে বিবেচিত হতে পারে।

গ) অশালীন ইঙ্গিতপূর্ণ কোনো শব্দ, শব্দবন্ধ বা বাক্য ব্যবহার করা যাবে না।ঘ) স্নায়বিক চাপ তৈরি করতে পারে এমন কোনো বীভৎস, ভয়ংকর, অরুচিকর ছবি প্রকাশ করা যাবে না।

ঙ) কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে কোনো ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া/গোপনে তোলা কোনো ছবি প্রকাশ করা যাবে না।

চ) বিকৃত করে, জোড়া লাগিয়ে পরিপ্রেক্ষিত পরিবর্তন করে কোনো ছবি প্রকাশ করা যাবে না।

৫.

ক) কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করতে অবমাননামূলকভাবে কোনো প্রাণীবাচক নাম দেয়া যাবে না।

খ) সহব্লগারদের কিংবা ব্লগের বাইরের কাউকে গালিগালাজ করা যাবে না।

গ) কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা যাবে না।

ঘ) এমন কোনো নাম বা ছদ্মনাম (ইউজার নেম বা নিক) ব্যবহার করা যাবে না যা অন্য ব্লগারের নামকে হেয় করে, সামাজিকভাবে কোনো প্রচলিত নামকে হেয় করে কিংবা সামাজিক-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অশালীন মনে হয়।

ঙ) হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কারো ব্যক্তিগত তথ্য ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না।

চ) অন্য কারো জাতীয় পরিচয়পত্র, ক্রেডিট কার্ড, পাসপোর্ট নম্বর প্রকাশ করা যাবে না।

ছ) অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তির ঠিকানা বা ফোন-ফ্যাক্স নম্বর ইত্যাদি প্রকাশ করা যাবে না।

জ) ব্যক্তিগত পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের দুর্বল দিক ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না।

ঝ) কাউকে হত্যা, আঘাত বা আক্রমণের হুমকি দেয়া যাবে না। কোনো পরিস্থিতিতেই কাউকে ভয় দেখানো যাবে না।

ঞ) ব্লগে বা ব্লগের বাইরে অস্থিতিশীলতা তৈরির উদ্দেশ্যে সংগঠিত হওয়া বা সংগঠিত হওয়ার প্রচারণা চালানো যাবে না।

৬.

ক) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে অবমাননা ও কটাক্ষমূলক কোনো লেখা প্রকাশ করা যাবে না।

খ) সমাজে বিতর্ক আছে এমন বিষয়ে মন্তব্য ও লেখা প্রকাশ করতে হলে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তা করতে হবে।

গ) রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দাঙ্গা-পরিস্থিতির বা রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে এমন লেখা প্রকাশ করা যাবে না।

ঘ) রাজনৈতিক নেতাদের প্রতি ব্যক্তিগত বিদ্বেষ প্রচার করা যাবে না।

ঙ) সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।

চ) প্রচলিত আইনে অপরাধ বলে গণ্য হয় এমন কোনো কাজের সমর্থনে প্রচারণা চালানো যাবে না।

৭.

ক) কোনো ভাইরাস, স্পাইওয়্যার বা ম্যালওয়ারের লিংক দেয়া যাবে না। হ্যাকিং এবং ক্র্যাকিং করার কোনো সূত্র বা এ সম্পর্কিত কোনো সফটওয়ারের লিঙ্ক ব্লগে প্রকাশ করা যাবে না। হ্যাকিং বা ক্র্যাকিংয়ে উৎসাহ দিয়ে কোনো লেখা প্রকাশ করা যাবে না।

খ) কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা ট্রেড ইউনিয়নের নামে ব্লগ খোলা যাবে না। কোনো সামাজিক বা সাংস্কৃতিক সংগঠনের নামে ব্লগ খুলতে হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে নিবন্ধনকারীর ন্যায্যতা প্রমাণ করতে হবে।

গ) কোনো ব্র্যান্ডের সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে নেতিবাচক লেখা দেওয়া যাবে না।

ঘ) ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন, আলোচনা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সম্পর্কিত কোনো বিজ্ঞপ্তি বাদে বাণিজ্যিক উদ্দেশে বিজ্ঞাপন প্রচারের আগে অবশ্যই ব্লগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।

ঙ) ধূমপান, মাদক ও নেশাকে উৎসাহিত করে কোনো বিজ্ঞাপনমূলক লেখা, ছবি, ভিডিও বা অডিও প্রকাশ করা যাবে না।

৮.

ক) একই ব্লগার জরুরি প্রয়োজন ছাড়া প্রথম পাতায় একটির বেশি পোস্ট করতে পারবেন না। এক সঙ্গে একটির বেশি লেখা দিলে প্রয়োজনে অতিরিক্ত লেখা প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে।

খ) একই বিষয়ে একাধিক পোস্ট দেয়া হলে এবং সেগুলোয় বিষয়বৈচিত্র্য না থাকলে একটি রেখে বাকিগুলোকে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে।

গ) কোনো খবর দিতে হলে প্রাথমিক উৎস থেকে তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে এবং তথ্যের সঙ্গে সে উৎস উল্লেখ করতে হবে। প্রকাশিত খবর মিথ্যা হলে ব্লগারকে বাতিল করা হবে।

ঘ) কারও বিরুদ্ধে একাধিক নাম বা ছদ্মনাম (ইউজার নেম বা নিক) ব্যবহার করে ব্লগে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার সকল ছদ্মনাম বাতিল করা হবে।

ঙ) হ্যাকিং বা প্রতারণার ঘটনা ঘটলে এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চ) অন্য কোথাও থেকে সরাসরি কোনো লেখা বা লেখার অংশবিশেষ উদ্ধৃতি, রেফারেন্স, আলোচনা, সমালোচনা ইত্যাদি প্রয়োজনে ব্লগে প্রকাশ করতে হলে লেখার উৎস ও লেখকের নাম উল্লেখ করতে হবে। স্বত্ত্ব সংরক্ষিত লেখার ক্ষেত্রে ব্লগে প্রকাশের আগেই প্রয়োজনীয় অনুমতি নিতে হবে।

৯.

ক) প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় 'নীতিমালা ও ব্যবহারবিধি' পরিবর্তনের অধিকার রাখে।লেখার দায় ও স্বত্ব১. ব্লগে একটি নাম (ইউজার নেম) ও সংকেতমালা (পাসওয়ার্ড) ব্যবহার করে লেখা সকল লেখায় দায় সংশ্লিষ্ট ব্লগারের ওপর বর্তাবে। নাম ও সংকেতমালা সংরক্ষণ করার দায়িত্ব ব্লগারের। প্রকাশিত লেখার মত ও তথ্য ব্লগারের ব্যক্তিগত মত ও তথ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।

২. ব্লগে প্রকাশিত ছবি, তথ্য ও লেখার স্বত্ব ব্লগারের বলে গণ্য হবে। কপিরাইট আইন ভঙ্গ করে কোনো ছবি, তথ্য ও লেখা প্রকাশ করা যাবে না। প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ ব্লগে প্রকাশিত লেখার স্বত্ব দাবি করে না। তবে ব্লগে প্রকাশিত পোস্ট প্রয়োজনে প্রথম আলোর অন্য কোনো সংস্করণ বা মাধ্যমে ব্লগারের অনুমতি সাপেক্ষে প্রকাশ করা হতে পারে। এক্ষেত্রে অন্য কোনো পত্রিকায় প্রকাশের জন্য লেখাটি জমা দেয়া যাবে না। ব্লগার প্রথম আলোর নিয়ম অনুসারে লেখার সম্মানী পাবেন।

৩. ব্লগে প্রকাশিত পোস্ট ও মন্তব্যে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক কোনো আইন লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে তার দায় ব্লগারকে ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হবে। আইন লঙ্ঘনের পরবর্তী দায়দায়িত্বও তার ওপরই বর্তাবে।

৪. কোনো পোস্ট দেশীয় বা আন্তর্জাতিক আইন কিংবা সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে ব্লগ প্রশাসন ব্লগারকে আগাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বা না দিয়ে ব্লগটি অপসারণ করতে পারে।

৫. কোনো ব্লগারের অবৈধ বা বেআইনি কর্মকাণ্ডের জন্য যদি প্রথম আলো মামলার সম্মুখীন হয় তবে মামলার সম্পূর্ণ খরচ উক্ত ব্লগারকে বহন করতে হবে।৬. আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক প্রথম আলো যে কোনো সময় কোনো আগাম বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বা না দিয়ে যে কোনো ব্লগারের লেখা অপসারণ করতে পারে।৭. ব্লগে প্রকাশিত লেখা সংরক্ষণের দায় প্রথম আলো বহন করে না।

ব্লগের নীতিমালা লঙ্ঘিত হলে

১. যে কোনো ব্লগার ব্লগের নিয়ম লঙ্ঘন করলে, কেউ কাউকে আক্রমণ করলে বা কেউ আক্রান্ত বোধ করলে ই-মেইলে বা ব্লগের অভিযোগ বাটনের সাহায্যে অভিযোগ জানাতে পারেন। এ বিষয়ে কোনো পোস্ট না দিয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করাই কার্যকর পদ্ধতি বলে গণ্য হবে। ব্লগ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ পর্যালোচনা করে নীতিমালা অনুসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

২. কেউ ব্লগের নীতিমালা লঙ্ঘন করলে ব্লগ কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শিয়ে বা না দর্শিয়ে নীতিমালা ভঙ্গকারী লেখা প্রয়োজনে প্রথম পাতা থেকে অপসারণ করতে পারে, প্রথম পাতায় ব্লগারের লেখা প্রকাশের অধিকার রুদ্ধ করতে পারে কিংবা বিভিন্ন মেয়াদে ব্লগারকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

৩. ব্লগার একই বা ভিন্ন ভিন্ন অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে তাকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হতে পারে।

৪. কর্তৃপক্ষ যে কোনো ব্লগ ও ব্লগারকে কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই বাতিল করার অধিকার রাখে।



এই দীর্ঘ ও কঠোর বিধিমালা ব্লগারদের ব্লগিং এর স্বাচ্ছন্দ ক্ষুন্ন করবে বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া আমন্ত্রণব্যবস্থাটিও মাহবুব মোর্শেদ ও তার সাগরেদ চামুন্ডাদের জন্যে খোলা।

কেউ কেউ ভাবছেন, এই নীতিমালা মূলত কিছু ব্লগারের ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা চিন্তা করে তৈরি। উদাহরণ, ত্রিভুজকে বাংলা ব্লগে সবাই "ছাগুরাম" নামে চেনে এবং "ছাগু" নামে সম্বোধন করে। এ চর্চা ঠেকাতেই একটি ধারা বিধিমালায় ত্রিভুজের অনুরোধে সংযুক্ত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিধিমালাটি প্রস্তুত করার জন্যে প্রথম আলো ব্লগের মডারেশন কমিটিকেই দায়ী করা যায়। ঘোষিত তথ্য অনুযায়ী এর মডারেটর বিতর্কিত ব্লগার মাহবুব মোর্শেদ, যিনি স্বাধীনতাবিরোধী জামাতে ইসলামীর প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন একজন হিসেবেই ব্লগগুলিতে পরিচিত। সামরিক শাসনের প্রশংসা করেও তিনি মাঝে মাঝেই বিভিন্ন লেখা লিখে থাকেন। এমন একজন বিতর্কিত চরিত্রকে প্রথম আলো কেন ব্লগের দায়িত্বে রেখেছে, এ নিয়েও ব্লগারদের মধ্যে কয়েক মাস ধরে জল্পনাকল্পনা চলছিলো। কয়েকজন ব্লগার কোন উৎস উল্লেখ না করেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, যায়যায়দিনে চাকরির সময় থেকেই মাহবুব মোর্শেদ একটি স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর কাছ থেকে মাসোহারা পেয়ে আসছেন।

আরো উল্লেখ্য যে প্রথম আলো ব্লগ নিয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্যে একটি গোপন সভা ডাকা হয়, যেখানে প্রথম আলোতে জাবেদ সুলতান পিয়াস লিখিত একটি খবর অনুযায়ী নিচের ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।


১. প্রথম আলো ব্লগের বিভাগীয় সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ

২. প্রথম আলো ব্লগসাইটের কারিগরি নির্মাতা হাসিন হায়দার

৩. ব্লগার মিলটন

৪. ব্লগার সুমন রহমান

৫. ব্লগার রাজ্জাক

৬. ব্লগার অন্যমনস্ক শরৎ

৭. ব্লগার একরামুল হক শামীম

৮. সাজ্জাদ শরিফ

৯. মৃদুল মাহবুব

১০. সফেদ ফরাজী,

১১. মাহমুদ শাওন

১২. কৌশিক আহমেদ

১৩. মেহরাব শাহরিয়ার

১৪. ফারহান দাউদ

১৫. তারিক টুকু

১৬. ইফতেখার ইনান

১৭. নুরুন্নবী হাছিব

১৮. তাওহিদ মিলটন

১৯. ফেরদৌস আহমেদ তানিন


ইতোপূর্বে ব্লগাররা সন্দেহ করেছিলেন, মাহবুব মোর্শেদের মত একজন অর্ধশিক্ষিত ও মেরুদন্ডহীন লোক একা প্রথম আলো ব্লগের মতো সম্ভাবনাময় একটি ব্লগের দায়িত্ব নিজের বিবেচনায় পরিচালনা করতে পারেন না, তাকে বুদ্ধি দেয়ার জন্যে আরো কূটবুদ্ধিসম্পন্ন কেউ রয়েছে। সুমন রহমান সেই প্রশ্নের জবাবে শূন্যস্থানটি পূরণ করেন। সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর গবেষণারত এই ভদ্রলোক নিজেকে ইদানীং কবি পরিচয় না দিয়ে ব্লগার হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন, যদিও তিনি পত্রিকায় একটি আর্টিকেল লিখে ব্লগারদের "শিক্ষানবিস লেখক" ডেকে উপহাস করেছিলেন।


ব্লগরাজনীতিতে সম্প্রতি নাম লেখানো প্লাটফর্ম প্রথম আলো ব্লগের প্রতি শুভকামনা ও অভিনন্দন।

Sunday 19 October 2008

দেখি, শুনি, লিখি

বাংলা ব্লগের বিস্তৃতির সাথে সাথে বাড়ছে ব্লগরাজনীতি। তৈরি হয়েছে ভিন্ন প্ল্যাটফর্ম, যোগ দিয়েছে ভিন্নমনা লেখক ও পাঠক, সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দল-উপদল, বেড়ে উঠেছ গোপন ব্লগার সংগঠন, জন্ম নিয়েছে ব্লগীয় নেতা, মুফতি ও গুরু। ব্লগের সমাজে, বা নিভৃতে নিজস্ব ব্লগদ্বীপে বসে চলছে ব্লগরাজনীতির নিপুণ জাল বোনা।

আমরা এরই নীরব দর্শক, পাঠক ও শ্রোতা ছিলুম। নীরব আর রইবো না। যা দেখবো, যা শুনবো, লিখবো।

পাঠক, চোখ রাখুন বিদ্যাকুটুশে। আর ধন্যবাদ জানাই কবি ও গল্পকার সুমন রহমানকে, যাঁর চমৎকার ব্লগটির নামানুসরণেই আমাদের এই বীক্ষণব্লগটির নামাঙ্কণ।